OrdinaryITPostAd

সরিষা ফুলের খাঁটি মধু চেনার উপায় এবং এর উপকারিতা জানুন

কোন ফুলের মধু সবচেয়ে ভালো?মধু আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তাছাড়া সরিষা ফুলের মধুর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ উপাদান থাকায় এটি আমাদের শরীরের জন্য খুব বেশি প্রয়োজন। আর এজন্য প্রয়োজন সরিষা ফুলের খাঁটি মধু চেনা। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা সরিষা ফুলের খাঁটি মধু চেনার উপায় জানি না।

সরিষা ফুলের খাঁটি মধু চেনার উপায় এবং এর উপকারিতা জানুন

তাই আজকে আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানবো সরিষা ফুলের খাঁটি মধু চেনার উপায় এবং মধুর বিভিন্ন ব্যবহার ও উপকারিতা সম্পর্কে। তাছাড়া এই মধু আমাদের ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত নিয়মিত মধু খাওয়া।

ভূমিকাঃ

বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতের মধু পাওয়া যায়। তবে সরিষা ফুলের মধু অনেক উপকারী এবং সহজলভ্য হওয়ায় এর জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া এই মধুর দাম অন্যান্য মধুর তুলনায় কম হওয়ায় প্রত্যেকেই কমবেশি এই মধু খেতে পারে। তাছাড়া মধুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ঔষধিগুন।

 এটি আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময় কার্যকর ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে আমাদের ত্বকের জন্য এটি বেশ উপকারী। আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতেও মধু সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া এটি আমাদের শরীরে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে।

 বিশেষ করে শীতকালে মধুর উপকারিতা বলে শেষ করার মত নয়। এটি বাচ্চাদের জন্যও অনেক বেশি উপকারী। শীতকালে বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের ঠান্ডা জনিত সমস্যার সমাধানে মধু কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

সরিষা ফুলের মধু জমে কেন?

মধু জমে যাওয়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বিশেষ করে শীতকালে মধু জমে  যাওয়া নিয়ে অনেকেই নানান ধরনের চিন্তাভাবনা করেন। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ভাবেন মধুর
 মধ্যে ভেজাল আছে এজন্য মধু জমে যাচ্ছে। এই কথাটা কিন্তু মোটেই ঠিক নয়।


 কেননা সরিষা ফুলের মধুতে প্রচুর পরিমাণে গ্লুকোজ থাকে, আর এই গ্লুকোজ  থাকার কারণে সরিষা ফুলের মধু জমে যায়। আর যে মধুতে যত বেশি গ্লুকোজের পরিমাণ থাকবে সে মধু তত তাড়াতাড়ি জমে যাবে।

সরিষা ফুলের মধুকে কেন ক্রিম হানি বলা হয়ঃ

সরিষা ফুলের মধ্যে গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি থাকার কারণে শীতকালে সরিষা ফুলের মধু জমে যায়। আর এই মধু জমে গিয়ে ক্রিমের মত দেখায় এজন্য এই ফুলের মধুকে ক্রিম হানি বলা হয়।

সরিষা ফুলের মতো কখন পাওয়া যায়?

বাংলাদেশের সরিষা ফুলের মধু পাওয়ার উপযুক্ত সময় হচ্ছে নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। কারণ এ সময় সরিষা খেতে প্রচুর পরিমাণে ফুল আসতে শুরু করে তখন চাষিরা তাদের মৌ বাক্স সরিষা ক্ষেতের পাশে রেখে দেয় আর ওই ফুল থেকে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ করে মৌ বাক্সে রেখে দেয় এভাবেই সরিষা ফুলের মধু পাওয়া।

সরিষা ফুলের খাঁটি মধু চেনার উপায়ঃ

 খাঁটি মধু চেনার অনেকগুলো উপায় আছে নিম্নে সেগুলো দেওয়া হল-

  • সরিষা ফুলের ঘাঁটি মধুতে হালকা মিষ্টি স্বাদ এবং ফুলের একটি প্রাকৃতিক গন্ধ থাকে। তাছাড়া এটি খেলে গলা দিয়ে যাওয়ার সময় উষ্ণতা অনুভূত হয়।
  • এক ফোটা একটি গ্লাসে কয়েক ফোঁটা মধু ফেলুন যদি মধু তলায় জমে যায় এবং সহজে মিশে না যায় তবে মনে রাখবেন সেটি খাঁটি মধু।
  • এই ফুলের মত ঘনা বা পাতলা যাই হোক না কেন সারা বছরই জমে থাকে।
  • সরিষা ফুলের মধুর গন্ধ সরিষার মতই হয়, তবে একটু ঝাঁঝালো স্বাদের হয়।
  • সরিষা ফুলের মধু যখন পাতলা অবস্থায় থাকে তখন ফেনা দেখা যায়। আবার ঘন অবস্থাতেও মাঝে মাঝে ফেনা দেখা যায়।
  • অন্যান্য মধুর তুলনায় সরিষা ফুলের মধু ঘন হয়ে থাকে বেশি।
  • শীতকালে এই মধু জমে ক্রিমের মতো হয়ে যায়।
  • সরিষার ফুলের মধু বেশিদিন জমে থাকলে সাদা রঙের মতো দেখা যায়।

সরিষা ফুলের মধু খাওয়ার নিয়মঃ

সরিষা ফুলের মধু খাওয়ার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। আপনি যদি সঠিক নিয়মে সরিষা মধু খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরের জন্য এটি অনেক উপকারী হতে পারে। তবে আসুন জেনে নেয়া যাক সরিষা ফুলের মধু খাওয়ার বিভিন্ন নিয়ম সম্পর্কে-

  • প্রতিদিনের সকালে খালি পেটে এক গ্লাস হালকা কুসুম গরম পানির সঙ্গে ১-২ চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এভাবে মধু খেলে এটি আপনার হজম শক্তি বাড়াবে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করবে।
  • রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস কুসুম গরম দুধে এক চা চামচ মধু  খেলে এটি আপনার ভালো ঘুম আনতে সাহায্য করবে এবং শরীরকে শিথিল করবে।
  • সকালের নাস্তায় পাটি সঙ্গে পাউরুটি র সঙ্গে ২ চামচ মধু মিশিয়ে খাওয়া যায়।
  • বিভিন্ন ধরনের শরবত যেমন, লেবুর শরবতের মধ্যে সরিষা ফুলের মধু মিশিয়ে খাওয়া যায়।
  • জেলির পরিবর্তে সরিষা ফুলের মধু খাওয়া যায়।
  • চিনির পরিবর্তে সরিষা ফুলের মধু খাওয়া যায়।
  • বিভিন্ন ড্রাই ফ্রুটস এর সাথে মিশিয়ে সরিষা ফুলের মতো খাওয়া যায়।

সরিষা ফুলের মধু খাওয়ার উপকারিতাঃ

সরিষাফুলের মধু একটি প্রাকৃতিক খাদ্য এবং এর প্রচুর পরিমাণে স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। নিয়মিত সরিষা ফুলের মধু খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা সমাধানে এটি কার্যকর ভূমিকা পালন করে। নিচে সরিষা ফুলের মধুর উপকারিতা দেওয়া হল-

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ সরিষা ফুলের মধুতে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে, যা শরীরকে বিভিন্ন ধরনের রোগ যেমন-ঠান্ডা, সর্দি- কাশি ও গলা ব্যথা প্রতিরোধে সাহায্য করে

ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ করেঃ সরিষা ফুলের মধু ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া এটি ত্বকের জন্য প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে এবং ত্বকের শুষ্ক হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়কঃ সকালে খালি পেটে কুসুম গরম পানির সঙ্গে মধু খেলে এটি মেয়েটাবলিজম বাড়ায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

ক্ষত সারাতে সহায়কঃ সরিষা ফুলের মধুতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ থাকায় এটি যেকোনো ধরনের ক্ষততে লাগালে দ্রুত ক্ষত সারাতে সাহায্য করে এবং সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে।

ঘুমের সমস্যা দূর করেঃ রাতে ঘুমানোর আগে গরম দুধের সাথে মধু খেলে এটি মানসিক চাপ কমায় এবং ভালো ঘুম আনতে সহায়তা করে।

রক্ত নালীর সমস্যা দূর করেঃ সরিষা ফুলের মধুর সাথে কালোজিরা মিশিয়ে খেলে তা রক্তনালীর বিভিন্ন সমস্যা দূর করে। এতে পুরো দেহের রক্ত চলাচলের উন্নতি হয় এবং দেহের সকল কোষ সচল থাকে। এজন্য হৃদরোগের ঝুঁকি কমে এবং শরীর সুস্থ থাকে।

হজমশক্তি বৃদ্ধি করেঃ সরিষা ফুলের মধু হজমে সহায়ক এনজাইম দিয়ে পরিপূর্ণ। যখন খালি পেটে মধু খাওয়া হয় তখন তা পেটের মধ্যে থাকা গ্যাস বের করে দেয় এবং এনজাইমগুলোর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।

শক্তি বৃদ্ধি করেঃ সরিষা ফুলের মধু প্রাকৃতিক চিনি (গ্লুকোজ ও ফ্রুটস) সরবরাহ করে, যা শরীরকে তাৎক্ষণিক শক্তি দেয় এবং এটি ক্লান্তি দূর করে শরীরকে সতেজ রাখে।

সরিষা ফুলের মধুর দামঃ

সরিষা ফুলের মধুর দাম এলাকা, সরবরাহ, খাঁটি মধুর মান এবং বাজারের অবস্থার উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। তবে খাঁটি মধুর দাম বেশি হয়ে থাকে। এক কেজি খাঁটি সরিষা ফুলের মধুর দাম ৫০০ টাকা এবং ৫০০ গ্রাম মধুর দাম ২৫০ টাকার মত হয়ে থাকে।

মন্তব্যঃ

উপকারি এই মধুর সঠিক ব্যবহার আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে। আর অন্যান্য মধুর তুলনায় সরিষা ফুলের মধুতে গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই ভালো। 

তাছাড়া উপরের আর্টিকেলে সরিষা ফুলের মধুর বিভিন্ন উপকারিতা তুলে ধরেছি। আশা করি এই উপকারগুলো জানার পর আপনারা প্রত্যেকে সঠিক নিয়মে নিয়মিত মধু পান করবেন এবং নিজেকে সুস্থ রাখবেন। কেননা নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে সুস্থ রাখতে মধুর কোন বিকল্প নেই।

 আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন এবং মধু সম্পর্কে অনেক জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছেন। আর যদি এরকম তথ্যবহুল ও উপকারী কন্টেন্ট পেতে চান তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url