OrdinaryITPostAd

শীতকালে ব্রণ কেন বেশি হয় এবং এর ঘরোয়া প্রতিকার জানুন?

শীতকালে মুখে কি মাখা উচিত?যাদের অ্যাকনি প্রবণ ত্বক তাদের শীতকাল আসলে দুশ্চিন্তার কোন শেষ থাকে না, কেননা এই সময় ব্রণের প্রবণতা বাড়তে থাকে। তাই তারা অনেক জায়গায় সার্চ করতে থাকে শীতকালে ব্রণ কেন বেশি হয় এটা নিয়ে। কিন্তু এ বিষয়ে তেমন কোন সমাধান পান না।

শীতকালে ব্রণ কেন বেশি হয় এবং এর ঘরোয়া প্রতিকার জানুন?
এজন্য তারা নিরাশ হয়ে যায় এবং ব্রণ দূর করার ঘরোয়া প্রতিকার জানতে চায়। তাই আজকের আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা শীতকালে ব্রণ কেন বেশি হয় এবং ব্রণ দূর করার কিছু কার্যকরী ঘরোয়া উপায় নিয়ে এসেছি যেগুলো আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।

ভূমিকাঃ

ব্রণের সমস্যায় পড়েননি বা ভোগিনী এমন ছেলে- মেয়ে খুঁজে পাওয়া কঠিন। কারণ বয়সন্ধিকালে প্রত্যেকেরই ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়। এ সময় হরমোনাল পরিবর্তনের জন্য এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। তবে এ সমস্যা কারো কারো ক্ষেত্রে বেশিদিন থাকে না আবার কেউ কেউ এ সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরে ভোগেন। 

কেননা ব্রণ মানুষের ত্বকের উজ্জ্বলতা ও সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়। যা অনেকের কাছে খুবই বিব্রতকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। সারা বছরে কম বেশি থাকে তবে শীতকালে এটি প্রকট আকার ধারণ করে। তবে এ সমস্যা নিয়ে দুশ্চিন্তার করার খুব একটা কারণ নেই। 

এ সমস্যা সমাধানের জন্য আপনাকে জানতে হবে শীতকালে ব্রণ কেন বেশি হয় এবং ব্রণ দূর করার ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে।

ব্রণ কি?

অ্যাকনি ভালগারিস বা ব্রণ হলো মানব ত্বকের একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ বিশেষ যা বিশেষত লালচে ত্বক, প্যাপ্যুল, নডিউল, পিম্পল, তৈলাক্ত ত্বক ক্ষত চিহ্ন বা কাটা দাগ ইত্যাদি দেখে চিহ্নিত করা যায়।

কোন ভিটামিনের অভাবে মুখে ব্রণ হয়?

ভিটামিন এ যুক্ত খাবারের অভাবে মুখে ব্রণ হয়। কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবারে ভিটামিন এ থাকে, যা স্বাস্থ্যকর ত্বকের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাই আপনার ত্বককে ব্রণ মুক্ত রাখার জন্য প্রতিদিন ভিটামিন এ যুক্ত খাবার পাশাপাশি বেশি ভাজাপোড়া এবং তেলযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।


 পাশাপাশি আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় তিতাজাতীয় খাবার রাখার চেষ্টা করবেন, কারণ তিতা জাতীয় খাবার আপনার ত্বকে ব্রণ কমাতে সাহায্য করবে।

শীতকালে ব্রণ বেশি হওয়ার কারণ?

যাদের ব্রণ প্রবণ ত্বক তাদের কম বেশি সারা বছরেই ত্বকে ব্রণ থাকে। শীতকালে ত্বকে ব্রণ হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে শুষ্কতা। আরেকটি কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত সিবাম নিঃসরণ হওয়া। সিবাম হল ত্বক থেকে বের হওয়া একপ্রকার তেল। আর এই তেল ত্বক উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে।

 শীতকালে এই শিবাম অতিরিক্ত নিঃসরণ হয় তখন এর ওপর নানা ধরনের মৃত কোষ ও ধুলিবালি জমে লোমকূপ বন্ধ করে দেয় ফলে দেখা দেয় ব্রণ। এগুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন কারণে শীতকালে ত্বকে ব্রণ বেড়ে যায়। তবে আসুন জেনে নেয়া যাক সেই কারণগুলো-

  • শুষ্ক ত্বক মৃত কোষ মৃত কর জমতে সাহায্য করে, যা লোমকূপ বন্ধ করে ফেলে ফলে শীতকালে শীতকালে ব্রণের প্রবণতা বাড়ে।
  • যাদের মাথায় আগে থেকেই খুশকি সমস্যা থাকে শীতকালে তাদের মুখে ব্রনের প্রবণতা বাড়ে, বিশেষ করে সিজনাল খুশকি আপনাদের অনেকের মুখে ব্রণের কারণ হতে পারে।
  • অনেকেই শীতকালে ত্বক শুষ্ক থাকার কারণে বেশি বেশি ময়েশ্চারাইজার ইউজ করে। অনেক সময় কিছু ভারী ময়েশ্চারাইজার লোমকূপ বন্ধ করে দেয় যার ফলে ব্রণ বেড়ে যায়।
  • শীতে পানি পানের পরিমাণ কমে যায়, যার কারণে ত্বকে ডিহাইড্রেশন দেখা দেয় এর ফলে ব্রণের প্রবণতা বাড়ে।
  • শীতকালে হরমোনের পরিবর্তনের কারনে ব্রণ বাড়তে থাকে।

শীতকালে ব্রণ প্রতিরোধের উপায়ঃ

শীতকালে ব্রণ প্রতিরোধের কিছু উপায় আছে। নিম্নে ব্রণ প্রতিরোধের কিছু কার্যকরী উপায় দেওয়া হলো-

  • শীতকালে ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে এজন্য হালকা এবং মৃদু ক্লিনজার ব্যবহার করতে হবে।
  • মুক্ত এবং হালকা ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন। কেননা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য প্রতিবার মুখ ধোয়ার পর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
  • বেশি বেশি পানি পান করুন কম করে হলেও দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
  • শীতে ত্বককে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্নি থেকে রক্ষা করতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
  • শীতকালে ব্রণ মুক্ত ত্বক রাখতে ভিটামিন এ, বি, সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন ফল শাক-সবজি এবং বাদাম খাওয়ার অভ্যাস করুন।
  • প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং অতিরিক্ত তেল ও ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • বাইরের ধুলিবালি থেকে ত্বককে রক্ষা করুন। এজন্য বাইরে গেলে মুখ ঢেকে রাখুন এবং বাহির থেকে আসার পর সঙ্গে সঙ্গে মুখ ধুয়ে নিন।
  • কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের মাত্রা কমাতে হবে।
  • নখ বা পিন দিয়ে ব্রণ ফোটানো থেকে বিরত থাকতে হবে। এমনকি হাত দিয়ে চেপে ব্রণ থেকে রস বা পুঁজ বের করার চেষ্টা করবেন না।
  • মিষ্টি জাতীয় খাবার অর্থাৎ চিনি জাতীয় খাওয়া এড়াতে হবে।
  • ত্বক ভালো রাখতে মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকুন।

ব্রণ দূর করার ঘরোয়া উপায়ঃ

ব্রণ দূর করার জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করতে পারেন। আর এগুলো সহজলভ্য এবং প্রাকৃতিক হওয়ায় ত্বকের কোন ক্ষতি করবে না ত্বক থাকবেন নিরাপদ।

লেবুর রস ও মধুঃ এ চামচ লেবুর রসের সঙ্গে এক চা চামচ মধু মেশান। তারপর উক্ত মিশ্রণ ব্রণের উপর লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করে পানি ধুয়ে ধুয়ে ফেলুন।এটি ব্রণের সমস্যা কমাতে খুবই উপকার। কারণ লেবুর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুন কমায় আর মধু ত্বক মশ্চারাইজ রাখে।

টমেটো রসঃ প্রথমে একটি পাকা টমেটো নিয়ে তারপর এর রস বের করে সেই রস সরাসরি ব্রণের উপর লাগান। ১৫-২০ মিনিট রাখার পর ধুয়ে ফেলুন। কেননা টমেটো প্রাকৃতিক এসিড ব্রণের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে।

গোলারজল ও চন্দন গুড়াঃ গোলাপ জল ও চন্দন গুড়া একত্রে মিশিয়ে একটি পেস তৈরি করুন। এরপর উক্ত পেস্ট ব্রণের ওপর লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে পরিষ্কার ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বক ঠান্ডা রাখে এবং ব্রণ কমায়।

হলুদ ও দুধঃ এক চামচ কাঁচা হলুদের সাথে এক চামচ কাঁচা দুধ মেশান। তারপর উক্ত মিশ্রণ ব্রণের উপর লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।কেননা হলুদ হল প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক এবং দুধ ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে।

বেসন ও দইঃ এক চা চামচ বেসনের সঙ্গে এক চা চামচ টক দই মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এরপর তৈরিকৃত রেমিডি শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত ত্বকে লাগিয়ে রাখুন এবং শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করে এবং ব্রণের চিহ্ন হালকা করে।

রসুনঃ রসুনের একটি কোয়া কেটে তার রস সরাসরি ব্রণের উপর লাগান। রসুনের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে।

পুদিনা পাতা পেস্টঃ প্রথমে কয়েকটি তাজা পুদিনা পাতা নিয়ে পিষে পেস্ট তৈরি করুন। এরপর তৈরি কৃত পেস্ট ব্রণের উপর লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। কেননা এটি ত্বক ঠান্ডা করে এবং প্রদাহ কমায়।

গ্রিন টিঃ গ্রিন টি বানিয়ে ঠান্ডা করুন, এরপর তুলা দিয়ে ব্রণের উপর লাগান। গ্রিন টিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ব্রণ দ্রুত সারাতে সাহায্য করে।

অ্যালোভেরাঃ প্রথমে খাঁটি অ্যালোভেরা জেল বের করে নিন। এরপর উক্ত অ্যালোভেরা জেল সরাসরি ব্রনের স্থানে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে দেওয়ার পর ধুয়ে ফেলুন। এভাবে দিনে দুইবার ব্যবহার করতে পারেন। অ্যালোভেরায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য থাকায় এটি ত্বক ময়েশ্চারাইঁ করে, ত্বককে প্রশমিত করে এবং ব্রণ নিরাময় করে।

দারুচিনির গুড়া ও গোলাপজলঃ দারুচিনির গুঁড়া ও গোলাপজল একত্রে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। এই পেস্ট ব্রণের উপর লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে দেওয়ার পর ধুয়ে ফেলুন। এতে ব্রণের সংক্রমণ চুলকানি ও ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে।

মন্তব্যঃ

আশা করি আজকে আর্টিকেলটি পড়ার পর থেকে ব্রণ নিয়ে আর বেশি দুশ্চিন্তা করবেন না। কেননা আপনার এখন প্রত্যেকে জানতে পেরেছেন শীতকালে ব্রণ কেন বেশি হয়। এবং এর প্রতিকার সম্বন্ধে। তাছাড়া ব্রণ দূর করার জন্য আপনাদেরকে অনেক ঘরোয়া উপায় জানিয়েছে। 

যদি আপনারা এগুলো নিয়মিত ব্যবহার করেন তাহলে আপনাদের  ত্বকে ব্রণের সমস্যা থাকবে না ইনশাআল্লাহ। তাই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে এবং উপকারী মনে হয়ে থাকে তাহলে আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করবেন। 

তাছাড়া আর্টিকেল সম্বন্ধে যদি আপনাদের কোন মূল্যবান মতামত থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url