OrdinaryITPostAd

শীতে ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে বাচ্চাদের সর্দি- কাশি থেকে মুক্ত রাখা যায় জানুন?

সর্দি-কাশি হলে বাচ্চাকে কোন কোন খাবার খাওয়াতে হয়?আসলেই বাচ্চাদের সর্দি কাশি নিয়ে আপনারা চিন্তিত থাকেন আর ভাবেন ওষুধ ছাড়াই কিভাবে কিভাবে ঘরোয়া উপায়ে সর্দি- কাশি দূর করা যায়। কিন্তু এ বিষয়ে আপনাদের সেরকম কোন ধারণা নেই বললেই চলে।

শীতে ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে বাচ্চাদের সর্দি- কাশি থেকে মুক্ত রাখা যায় জানুন?
তাই আজকে আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে জানাবো কিভাবে ঘরোয়া উপায়ে বাচ্চাদের সর্দি কাশি দূর করা যায় সে সম্পর্কে। আরও জানবো সর্দি -কাশি হলে কোন ধরনের খাবার থেকে বাচ্চাদেরকে বিরত রাখতে হবে সে সম্পর্কেও।

ভূমিকাঃ

 বাচ্চাদের কম বেশি সারা বছরই সর্দি- কাশি লেগে থাকে, বিশেষ করে যখন সিজন চেঞ্জ হয় তখন। তবে একরকম বাড়ে সবচেয়ে বেশি শীতকালে। শীত আসলে বাচ্চাদেরকে নিয়ে মায়েদের দুশ্চিন্তার কোন শেষ থাকে না। সর্দি- কাশির সাথে আবার অনেক সময় জ্বরও আসে। এজন্য বাচ্চা ঠিকমত খেতে পারে না, রাতে ঘুমাতে পারে না , শ্বাস প্রশ্বাস নিতে পারে না ইত্যাদি নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয়


তাই অনেক মা আছে শীতের সময় বাচ্চাদেরকে সর্দি -কাশি থেকে দূরে রাখার জন্য অনেক ঘরোয়া উপায় খুঁজে থাকেন। কেননা এসব বিষয়ে ঘরোয়া উপায় গুলো বেশ কার্যকর হয়ে থাকে তারপর সাইড ইফেক্ট নেই বললেই চলে।

বাচ্চাদের সর্দি কাশির লক্ষণঃ

বাচ্চাদের সর্দি কাশির সংক্রমণ সাধারণত ভাইরাস সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে এবং এটি খুব সহজেই চিহ্নিত করা যায়। তবে আপনাদের বাচ্চার বয়স এবং শরীরের অবস্থার ওপর লক্ষণগুলো ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। নিচে সাধারণ লক্ষণ গুলো আলোচনা করা হলো-

  • সর্দি
  • গলা ব্যথা বা জ্বালা করা
  • মাথা ব্যথা
  • শরীরে ব্যথা
  • কানে ব্যথা
  • নাক দিয়ে পানি পড়া
  • নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া
  • হালকা জ্বর এবং দুর্বলতা
  • হাচিঁ দেওয়া
  • চোঁখ দিয়ে পানি পড়া

বাচ্চাদের সর্দি কাশির কারণঃ

বাচ্চাদের সর্দি-কাশি সাধারণত ভাইরাস জনিত কারণে হতে পারে। এই লক্ষণগুলি ৫-৭ সাত দিনের মধ্যে কমে যায়। বাচ্চাদের সর্দি- কাশি ভাইরাস ছাড়া অন্যান্য কারণেও হতে পারে। নিম্নে এর প্রধান কিছু কারণ দেয়া হলো-

  • ঠান্ডা আবহাওয়া ও পরিবেশগত কারণ
  • অ্যালার্জি
  • হুপিং কাশি
  • শ্বাসনালীর প্রদাহমূলক ব্যাধি
  • হাঁপানি
  • ইমিউন সিস্টেম দুর্বলতা
  • নিউমোনিয়া
  • গলদাহ
  • সিগারেটের ধোঁয়া বা বায়ু দূষণ
  • সংক্রামক রোগ
  • ঠান্ডা খাবার বা পানীয়

বাচ্চাদের সর্দি- কাশি দূর করার ঘরোয়া উপায়ঃ

শীত আসতে না আসতেই বাচ্চারা নানান ধরনের সমস্যায় ভুগে থাকেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা যেটি সেটি হল সর্দি- কাশি। কারণ সারা শীতের মধ্যে বাচ্চাদের কমবেশি সর্দি- কাশি লেগে থাকে। আর এই সর্দি-কাশির জন্য বাচ্চাদের রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারে না। বাচ্চাদের সাথে সাথে মায়েরাও ঠিকমতো রাতে ঘুমাতে পারেন না। 


অনেক সময় সর্দি- কাশির ওষুধও ঠিক মত কাজ করে না। তবে বাচ্চাদের সর্দি- কাশি দূর করার জন্য এ সময় কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করতে পারেন। যেগুলো খুবই কার্যকর হতে পারে আপনার শিশুর জন্য। তবে আসুন জেনে না সেরকম কার্যকর কিছু ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে-

মধু ও আদাঃ বাচ্চাদের সর্দি কাশি সারাতে এটি বেশ কার্যকর এবং উপকারী রেমিডি। এই রেমেডি তৈরির জন্য এক চা চামচ মধু সঙ্গে এক ফোঁটা আদার রস ভালো করে মিশিয়ে আপনার শিশুকে দিনে দুই থেকে তিনবার খাওয়াতে পারেন এতে ভালো উপকার পাবেন। তবে আপনার শিশুর বয়স যদি এক বছরের কম হয় তাহলে মধু মেশাবেন না।

তুলসী ও মধুর মিশ্রণঃ এটিও বাচ্চাদের সর্দি কাশির জন্য খুবই কার্যকরী। ৪ - ৫ টি তুলসী পাতা নিয়ে রস বের করে নিন। তারপর এই রস এর রসের সাথে মধু মিশিয়ে হালকা গরম করে নিয়ে আপনার শিশুকে প্রতিদিন সকাল ও রাতে খাওয়াতে পারে এতে বেশ উপকার পাবেন।

সরিষার তেল ও রসুন মালিশঃ সরিষার তেলের মধ্যে ২-৩ তিন কোয়া রসুন থেত করে দিয়ে তারপর সেটি হালকা গরম করে নিন। এবার ঠান্ডা হয়ে গেলে সেই তেল বাচ্চার পিঠ, বুক ও পায়ে মালিশ করুন। এটি মালিশের ফলে বাচ্চার শ্বাসনালী খুলে যাবে এবং বাচ্চা অনেক আরাম বোধ করবে।

গরম দুধের সাথে হলুদঃ এক গ্লাস গরম দুধের সঙ্গে এক চিমটি হলুদ গুঁড়া মেশান। তারপর এটি আপনার বাচ্চাকে খেতে দিন। এটি আপনার বাচ্চা শরীর গরম রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করবে।

লেবু ও মধুর সিরাপঃ এক চা চামচ লেবুর রসের সঙ্গে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে খান। কেননা এটি খাওয়ালে গলা ব্যথা এবং কাশি কমাতে সাহায্য করবে।

তুলসী ও আদার চাঃ পানির মধ্যে কিছু তুলসী পাতা, আদা ও মধু দিয়ে ফুটিয়ে চা তৈরি করে নিন। এরপর এই চা এক চা চামচ করে দিনে ২ - ৩ বার আপনার শিশুকে খাওয়ান এতে অনেক উপকার হবে।

গরম পানির ভাপঃ আপনার শিশু যদি একটু বড় হয়ে থাকে তাহলে এই পদ্ধতিতে আপনি অবলম্বন করতে পারেন। পদ্ধতি করার জন্য প্রথমে গরম পানির মধ্যে ইউক্যালিপটাস তেল বা তুলসী পাতা দিন। তারপর বাচ্চাকে নিরাপদ দূরত্বে বসিয়ে ভাব নেওয়ার ব্যবস্থা কর। এটি আপনার শিশুর নাক বন্ধ ও কফ কমাতে সাহায্য করবে।

নারিকেল তেল ও কর্পূরঃ নারিকেল তেল ও কর্পূর গরম করে নিন। তারপর ঠান্ডা করে আপনার শিশুর বুকে, পিঠে এবং গলায় মাখান, যার ফলে আপনার শিশু অনেক উপকার হবে।

জয়ফল ও দুধঃ সর্দি সারাতে দুধে জয়ফল খুব ভালো কাজ করে। কয়েক চামচ দুধে এক চিমটি জয়ফল গুঁড়া দিয়ে একবার ফোটান এবং ঠান্ডা হয়ে গেলে শিশুকে খাওয়ান।

সর্দি- কাশি হলে বাচ্চাকে যেসব খাবার খাওয়ানো যাবে নাঃ

সর্দি কাশি হলে বাচ্চার তেমন কিছু খাবার আছে যা বাচ্চাদের এড়িয়ে চলা উচিত, কেননা এসব খাবার তাদের অবস্থার অবনতি করতে পারে, গলা বা শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। আসুন তবে জেনে নেওয়া যাক সেসব খাবার সমন্ধে-

  • এ সময় বাচ্চাদের দুধ বা দুগ্ধজাতীয় খাবার যেমন দই, পনির ক্রিম,মাখন এমনকি প্রয়োজন হলে দুধের পরে দুধ খাওয়াও বন্ধ করে দিন। এর পরিবর্তে মৌসুমী ফল ও শাকসবজি খাওয়ান। তবে এমন খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করুন যাতে যে খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। কেননা ভিটামিন সি শিশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
  • ভাজাপোড়া ও প্যাকেটজাত খাবার যেমন- চিপস, সসেস, ফেঞ্চফ্রাই, নাগেট, সিঙ্গারা, পিয়াজু ইত্যাদি খাবার থেকে শিশুকে বিরত রাখুন কেননা প্রত্যেক বাড়িতে কমবেশি এখন এই ধরনের খাবার থেকে থাকে। তাছাড়া এসব খাবার শিশুরা খেতে বেশ পছন্দ করে। কেননা শিশুরা যত এ ধরনের খাবার খাবে এদের গলায় মুখের পরিমাণ তত বাড়বে এতে শিশুদের অনেক কষ্ট হবে।
  • খুব বেশি মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া কারো জন্যই কাম্য নয়। এই সময় মিষ্টি বা মিষ্টিজাতীয় খাদ্য যেমন-চকলেট ক্যান্ডি মিষ্টি ইত্যাদি খাওয়ালে শিশুদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। কেননা বেশি নিষ্ঠতা মিষ্টতা মিষ্টতা রক্তে হোয়াইট ব্লাড সেলস তৈরীর গতি কমিয়ে দেয়। এর ফলে শিশু রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমে যায়। ফলে খুব তাড়াতাড়ি সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • কিছু সবজি আছে যেমন- লাউ, করলা, মিষ্টি কুমড়া শরীর ঠান্ডা রাখে। তাই বাচ্চার ঠান্ডা লাগলে এ ধরনের সবজি খাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে।
  • ঠান্ডা বা শীতল খাবার যেমন, আইসক্রিম, কোল্ড ড্রিংক, ফ্রিজে রাখা ঠান্ডা দুধ বা খাবার খাবার থেকে শিশুদেরকে বিরত রাখবে। কারণ এসব খাবার খেলে বাচ্চাদের ঠান্ডা লাগার প্রবণতা বেড়ে যাবে এবং ঠান্ডার কারণে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিবে।
  • আপনার বাচ্চার সর্দি- কাশি হলে প্রচুর মশাযুক্ত ও তেল যুক্ত খাবার থেকে বিরত রাখুন। কেননা এই খাবার শিশুর গলায় জ্বালা তৈরি করতে পারে এবং এবং আপনার শিশুর শিশুর সর্দি কাশিকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই এসব খাবার এড়িয়ে চলুন।

সর্দি কাশি হলে কি বাচ্চাদের কলা খাওয়ানো যাবে?

সর্দি- কাশি হলে বাচ্চাদেরকে কলা খাওয়ানো যাবে কিনা এটা নিয়ে অনেকে বিধায় থাকেন। তবে ডাক্তারি মতে, সাধারণত কলা খাওয়ানোতে কোন সমস্যা নেই, এমন কি সর্দি- কাশি থাকলে। কলা একটি পুষ্টিকর ফল যা শিশুদের শক্তি ও পুষ্টি জোগাতে সহায়ক।

পরিশেষেঃ

বাচ্চাদের সর্দি -কাশি নিয়ে এত বেশি দুশ্চিন্তার কিছু নেই, কেননা এটা তেমন জটিল রোগ নয়। এ সর্দি -কাশি সাধারণত ৫-৭ লাইনের মধ্যে দিনের মধ্যেই কমে যায়। সর্দি- কাশির সাথে যদি শ্বাসকষ্ট জ্বর ইত্যাদি থাকে তাহলে অবশ্যই বাচ্চাকে ডাক্তার দেখাবেন।

 তাছাড়া যদি শুধু সর্দি- কাশি থাকে তাহলে উপরের সর্দি-কাশি দূর করার ঘরোয়া উপায়গুলো অবলম্বন করবেন তাহলে অবশ্যই ভালো ফলাফল পাবেন।আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক উপকারে আসছে। 

আর যদি উপকারে আসে তাহলে আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করবেন। আপনাদের যদি কোন মূল্যবান মতামত থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url