OrdinaryITPostAd

কিভাবে সঠিক নিয়মে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হয় বিস্তারিত জানুন?

গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাওয়ার নিয়মআমরা কম -বেশি সকালেই অ্যান্টিবায়োটিক খাই কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার সঠিক নিয়ম অনেকেই জানিনা। তাই না জেনে আমরা অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক ভুল করে থাকি। তাই আজকে আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে জানাতে যাচ্ছি কিভাবে সঠিক নিয়মে এন্টিবায়োটিক খাওয়া যায় সে সম্পর্কে।


কিভাবে সঠিক নিয়মে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হয় বিস্তারিত জানুন?

ভূমিকাঃ

বর্তমানে অ্যান্টিবায়োটিক একটি কমন ঔষধ। এমন একজন লোক নাই যে অ্যান্টিবায়োটিক খায়নি। কিন্তু সব ধরনের রোগে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া ঠিক নয়। আমরা না জেনে সব ধরনের রোগের কম বেশি অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে থাকে। অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার অনেকগুলো নিয়ম আছে সেগুলো আমরা মেনে চলি না। 

সঠিক নিয়মে অ্যান্টিবায়োটিক না খেলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাই আমরা চেষ্টা করব সঠিক নিয়মে এন্টিবায়োটিক খাওয়ার এবং এন্টিবায়োটিক খাওয়ার পর কি কি ধরনের খাবার খাওয়া যায় না সেগুলো মেনে চলবো।

অ্যান্টিবায়োটিক কি?

অ্যান্টিবায়োটিক এক ধরনের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল পদার্থ যা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে সক্রিয়। এটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সবচেয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধরনের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট এবং অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধগুলি এই ধরনের সংক্রমণের চিকিৎসা এবং প্রতিরোধে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

অ্যান্টিবায়োটিক এর কাজ কি?

এন্টিবায়োটিক হল এমন একটি ঔষধ যা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধে যা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধে বা ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয়। এটির কাজ হল ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করা বা তাদের মেরে ফেলা। তবে এটি শুধুমাত্র ব্যাকটেরিয়ারজনিত সংক্রমণে কার্যকর; ভাইরাসজনিত রোগে (যেমন সর্দি, কাশি বা ফ্লু) এটি কাজ করে না। চলুন জেনে নেওয়া যাক অ্যান্টিবায়োটিক এর কাজ-

ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি বন্ধ করা: কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার কোষ বিভাজন বা বৃদ্ধি বন্ধ করে। এতে ব্যাকটেরিয়া প্রাকৃতিকভাবে ধ্বংস হয়ে যায়।

ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলা: কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার কোষের প্রাচীর বা প্রোটিন ধ্বংস করে তাদের সরাসরি মেরে ফেলে।

অ্যান্টিবায়োটিক কি সব ওষুধের জন্য কাজ করে?

না, অ্যান্টিবায়োটিক কখনোই সব ওষুধের জন্য কাজ করে না। শুধু ব্যাকটেরিয়ার কারণে যদি কোন রোগ হয়ে থাকে তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক সে ক্ষেত্রে কাজ করবে। তাছাড়া যেমন, ভাইরাস, ফাঙ্গাস এগুলো দ্বারা যদি কোন রোগ হয়ে থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক কখনোই কাজ করবে না।

অ্যান্টিবায়োটিক খেলে শরীর দুর্বল হয় কেন?

অ্যান্টিবায়োটিক খেলে শরীর দুর্বল হয় যেহেতু অ্যান্টিবায়োটিক গুলি খারাপের সাথে মিশে ভালো ব্যাকটেরিয়া গুলোকে মেরে ফেলে তাই আপনি কিছুটা ক্লান্তি অনুভব করতে পারেন কারণ শরীরে ভারসাম্য বজায় রাখে।


 যদিও এটি বিরল, তবে কিছু এন্টিবায়োটিক আছে যা গুরুতর ক্লান্তি সৃষ্টি করতে পারে-এমন ধরনের যা দৈনন্দিন জীবনের কাজগুলো করা কঠিন করে তোলে।

অ্যান্টিবায়োটিক এর সাথে কি গ্যাসের ওষুধ খেতে হবে?

অ্যান্টিবায়োটিক এর সাথে গ্যাসের ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন কিনা তা নির্ভর করে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রকার এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, রোগীর শারীরিক অবস্থা এবং রোগীর গ্যাস্ট্রিক বা এসিডির ইতিহাসের উপর। তবে কোন রোগীর যদি এই ধরনের সমস্যা থাকে তাহলে তাদেরকে গ্যাসের ওষুধ খেতে

অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার সঠিক নিয়মঃ

অ্যান্টিবায়োটিক সঠিকভাবে গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভুলভাবে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া হলে এটির সংক্রমণ ভালো করতে ব্যর্থ হতে পারে এবং এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তৈরির ঝুঁকি বাড়ায়। তবে আসুন জেনে নেয়া যাক এন্টিবায়োটিক খাওয়ার সঠিক নিয়মসমূহ-

  • রেজিস্টার ডাক্তারের নির্দেশনা ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন এবং সঠিক ডোজ এবং সময়সীমা মেনে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করুন
  • এন্টিবায়োটিক খাওয়ার সময় যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করবেন কেননা এটি ওষুধের শোষণ এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি কমায়।
  • রোগের লক্ষণ ভালো হলেও ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী পুরো কোর্স শেষ করুন। কেননা মাঝপথে ঔষধ বন্ধ করলে সংক্রমণ ফিরে আসতে পারে এবং ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ হতে পারে।
  • অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া রক্ষা করতে দই বা প্রবায়োটিন খাবার খান। এটি ডায়রিয়া এবং হজমের সমস্যার ঝুঁকি কমায়।
  • একই ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে নানান রোগের কারণেই একজনে ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক অন্যজনের চিকিৎসায় ব্যবহার করা ঠিক নয়।
  • প্যাকেট খোলার পর অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে খুব বেশি দেরি করা যাবে না। শিশুদের ক্ষেত্রে একবার অ্যান্টিবায়োটিকের বোতল খোলা হলে পরবর্তী সময়ে অসুস্থ হলে ব্যবহারের জন্য রেখে দেওয়া একদমই উচিত নয়।

খালি পেটে অ্যান্টিবায়োটিক খেলে কি হয়?

খালি পেটে অ্যান্টিবায়োটিক খেলে অনেক সময় শরীরের জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে। কিছু অ্যান্টিবায়োটিক খালি পেটে খাওয়া যেতে পারে তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এন্টিবায়োটিক খাওয়ার পরে ভরা পেটে খাওয়া নিরাপদ। আসুন জেনে নেওয়া যাক খালি পেটে অ্যান্টিবায়োটিক খেলে কি হয়।

পেটের সমস্যা: খালি পেটে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রিক বা পেটের অস্বস্তি হতে পারে যেমন-বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা, এসিডিটির সমস্যা ইত্যাদি।

ওষুধের কার্যকারিতা কমে যাওয়া: এমন কিছু এন্টিবায়োটিক আছে যেগুলো খালি পেটে খাওয়া হলে শোষণ কম হতে পারে, ফলে ওষুধের কার্যকারিতা কমে যায় এবং রোগমুক্তি বিলম্বিত হতে পারে।

প্রচন্ড পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু কিছু অ্যান্টিবায়োটিক খালি পেটে খেলে প্রচন্ড পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে, যেমন মাথা ঘোরা বা দুর্বল লাগা, বুক জ্বালাপোড়া বা অস্বস্তি।

অ্যান্টিবায়োটিকের ডোজ কত দিনের হয়?

অ্যান্টিবায়োটিকখাওয়ার কিছু নিয়ম আছে। রোগীর সমস্যার ধরন বুঝে ডাক্তার অ্যান্টিবায়োটিকের ডস দিয়ে থাকেন যেমন ৫ দিন, ৭ দিন, ১০ দিন, ১২ দিন, ১৪ দিন বা দুই সপ্তাহ পর্যন্ত। সঙ্গে আরো বলেন কয়টি খাবেন, কিভাবে খাবেন এবং কখন খাবেন।

 তবে একটা কথা বলে রাখা ভালো ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধের ডোজ কমানো বা বাড়ানো ভালো নয়। তাছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়ম মেনে এবং কোর্স মেনে।

অ্যান্টিবায়োটিক খেলে কি কি খাওয়া যায় নাঃ

অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে বেশ কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলো অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা কমাতে পারে বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বাড়াতে পারে। নিচে অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে যেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত সেগুলো দেওয়া হলো-

দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার: দুধ ও দুগ্ধ জাত খাবার যেমন-দুধ, দই, চিজ বা ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার কিছু অ্যান্টিবায়োটিক এর কার্যকারিতা কমাতে পারে। কেননা ক্যালসিয়াম ওষুধের শোষণ ব্যাহত করে, ফলে অ্যান্টিবায়োটিক ঠিকমতো কাজ করতে পারে না

প্রচুর চর্বিযুক্ত খাবার: অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার (যেমন ভাজাপোড়া খাবার) হজম প্রক্রিয়া ধীর করে দিতে পারে, ফলে অ্যান্টিবায়োটিকের এর শোষণ কমে যেতে পারে।

অ্যালকোহল জাতীয় খাবার: এন্টিবায়োটিক কর চলাকালীন সময়ে মদ্যপান করা নিষেধ করে দেন চিকিৎসকরা। কেননা এটা শরীরের উপর খুবই ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। ওষুধ এবং এক অ্যালকোহল একই সঙ্গে খেলে তার প্রভাব পড়ে লিভারের উপর। এর ফলে লিভারের নানা ধরনের সমস্যার জন্ম নেয়।

ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার: অ্যান্টিবায়োটিকখেলে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াও উচিত নয়। গম, যব, ভুট্টা নানা ফাইবার সমৃদ্ধ শাক-সবজি থেকে দূরে থাকায় বাঞ্ছনীয়। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এন্টিবায়োটিক কাজ করতে দেয় না ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার।

কফি: কড়া অ্যান্টিবায়োটিক খেলে কফি থেকে দশ হাত দূরে থাকুন। কারণ অ্যান্টিবায়োটিকের সাথে ক্যাফিন মিশলে করা বিষক্রিয়া হয়ে যায়।

অ্যান্টিবায়োটিকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ

অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের ফলে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এদের মধ্যে কিছু সাধারণ আবার কিছু হালকা প্রকৃতির হয়, আবার কিছু গুরুতর হতে পারে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নির্ভর করে ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের প্রকার, ডোজ এবং রোগের শারীরিক অবস্থা ও সংবেদনশীলতার উপর।

 অ্যান্টিবায়োটিকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে অনেকের গলা, গালে, মুখের তালুতে বা জিহ্বায় সাদা দাগ পড়তে পারে। খাবার সময় বা গিলে ফেলার সময় ব্যথা হয় দাঁত মাজার সময় রক্তপাত হয়। এছাড়া শ্বাসকষ্ট, চুলকানি, ফুসকুড়ি ঠোট/মুখ/জিহ্বা ফুলে যাওয়ার মত অ্যালার্জিজনিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

পরিশেষেঃ

আমরা না বুঝে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই যে কোন ঔষধের দোকান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খায়। আজকের আর্টিকেলে আমরা অ্যান্টিবায়োটিক সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য তুলে ধরেছি। আশা করি আজকের পর থেকে সঠিক নিয়মে অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। 

ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কখনোই অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন। যদি  আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে তথ্যবহুল মনে হয়ে থাকে তাহলে আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url