কসর নামাজ কি এবং কছর নামাজ কিভাবে পড়তে হয় জানুন?
কসর নামাযের মাসয়ালা নামায তো আমরা অনেকেই পড়ি, কিন্তু কসর
নামাজ কি তা অনেকেই জানেনা এবং কসর নামাজ কিভাবে পড়তে হয় তাও জানিনা।
প্রত্যেকটি মুসলমানের জীবনে নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম।
আর এই গুরুত্বপূর্ণ নামাজ কখন কসম পড়তে হয় তা জানতে হবে। তাই আজকের আর্টিকেলের
মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে জানাতে যাচ্ছি কচর নামাজ কি এবং কিভাবে কসর নামাজ পড়তে
হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে।
ভূমিকাঃ
প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারীর জন্য নামাজ ফরজ। কিন্তু আমরা অনেক সময় বিভিন্ন
কাজে, ভ্রমণের উদ্দেশ্যে কিংবা জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন সময় সফরে যেয়ে থাকি।
সেখানে গিয়ে স্বাভাবিক নিয়মেই আমরা নামাজ আদায় করে থাকি। আল্লাহ সব সময়
বান্দা সুবিধার কথা ভেবে থাকেন। তাই সফরে গিয়ে আপনার যাতে কোন ধরনের কষ্ট না
হয়।
এজন্য আল্লাহ নামাজকে আপনার সুবিধার কথা চিন্তা করে সংক্ষিপ্ত করে দিয়েছেন।
কিন্তু আমরা একথা অনেকেই জানিনা। সফরে গিয়ে আমাদেরকে কখনোই পূর্ণ নামাজ
পড়া যাবে না অবশ্যই আমাদেরকে কসর নামাজ আদায় করতে হবে।
কসর নামাজ কি?
কসর আরবি শব্দ। কসর নামাজ হলো ইসলামে ভ্রমণরত অবস্থায় নামাজ সংক্ষিপ্ত
সংক্ষিপ্ত আকারে পড়ার একটি বিশেষ পদ্ধতি। এটি মুসলমানদের জন্য আল্লাহর পক্ষ
থেকে একটি সহজতা এবং বিশেষ দান।
সাধারণত কোন মুসাফির সফর অবস্থায় কোন মুকিম (স্থানীয়) ইমামের পেছনে
নামাজের নিয়ত না করলে, তার জন্য চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজ দুই রাকাত পড়া
জরুরি হয়। এটাকেই কসর নামাজ বলে। আর এটাই হলো ইসলামের বিধান।
কসর নামাজের নিয়তঃ
নিয়ত হল অন্তরের ইচ্ছা বা মনের ইচ্ছা। একজন মানুষের অন্তরে যে ইচ্ছা বা
উদ্দেশ্য থাকে সেটা প্রকাশ করাই হলো নিয়ত। তবে কসর নামাজের বিশেষ কোন ধরা বাধা
নিয়ত নেই। তবে আমরা যেভাবে ফরজ নামাজের নিয়ত করি সেভাবে কেবলামুখী হয়
বাংলায় বা আরবীতে নিয়ত করতে হবে। শুধুমাত্র সেখানে কসরের নামাজ এবং দুই রাকাত
কথাটি উল্লেখ করতে।
কসর নামাজের শর্ত কি?
কৌশর নামাজের সত্য হলো সেই বিধি- বিধান যা মেনে একজন মুসলিম ভ্রমণের সময় নামাজ
সংক্ষিপ্ত আকারে আদায় করতে পারেন। আসল জেনে নেয়া যা কসর নামাজের শর্তসমূহ
সম্পর্কে-
- যদি আপনার ভ্রমণের দূরত্ব প্রায় ৪৮ মাই ল বা ৭৮ কিমি বা তার বেশি হয় তাহলে ইসলামী শরীয়তে এটি "সফর" হিসেবে গণ্য করা হয়।
- তবে ভ্রমণ অবশ্যই বৈধ ও উদ্দেশ্যে হতে হবে। কিন্তু কোন পাপমূলক বা হারাম উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করলে কসর নামাজ আদায় করা বৈধ হবে না।
- ভ্রমণকারী যদি তার স্থায়ী বাসস্থান বা মাকামে ইকামাতে (স্থায়ী অবস্থানস্থল) পৌঁছে যান, তাহলে কসর নামাজ আর প্রযোজ্য হবে না।
- ভ্রমণটি হতে হবে ১৫ দিন বা তার কম সময়ের জন্য। যদি কোন ব্যক্তি এক স্থানে ১৫ দিনের বেশি থাকার নিয়ত করেন, তাহলে তিনি মুসাফির থাকবেন না এবং পূর্ণ নামাজ আদায় করতে হবে।
- আপনি আপনার ভ্রমণ শুরু করার পর থেকে কসর নামাজ আদায় করতে পারবেন। তবে ভ্রমণ শুরু করার আগে বা নিজ শহরে থাকাকালীন কসরর নামাজ আদায় করা যায় না।
- অবশ্যই ভ্রমণকারীর অবস্থান ভ্রমণের মধ্যেই থাকতে হবে। অর্থাৎ, ভ্রমণের সময় তার মূল উদ্দেশ্য ও গন্তব্য পৌঁছানো না হওয়া পর্যন্ত তিনি মুসাফির থাকবেন।
- যোহর, আসর এবং এশার নামাজের চার রাকাত ফরজকে দুই রাকাত করে পড়তে হবে। তবে ফজর এবং মাগরিবের ফরজ নামাজের রাকাত অপরবর্তীতে থাকবে।
কসর নামাজ কখন পড়তে হয়?
একজন মুসলিমকে কসর নামাজ তখনই পড়তে হয় যখন একজন মুসলিম মুসাফির বা ভ্রমণে
থাকে। আর এটি হলো কসর নামাজের একটি বিশেষ বিধান, যেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ
সংক্ষিপ্ত ভাবে পড়া হয়। নামাজ পড়ার সময় রয়েছে। আপনাদের জানার সুবিধার্থে
সেই সময়গুলো নিচে দেওয়া হল-
- যদি ভ্রমণের দূরত্ব ৪৮ মাইল বা প্রায় ৭৮ কিলোমিটার হয় তাহলে সেখানে কসর নামাজ পড়া বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে।
- মুসাফির থাকা অবস্থায় অর্থাৎ বাড়িতে ফেরার নিয়ত না থাকলে সেখানেও কসর নামাজ পড়তে হয়।
- যদি আপনার ভ্রমণের মেয়াদ ১৫ দিন বা তার কম হয়, তবে আপনাকে অবশ্যই কসর নামাজ পড়তে হবে। তবে ১৫ দিনের বেশি অবস্থান করলে সেখানে আপনাকে পুণ্য নামাজ আদায় করতে হবে।
কসর নামাজ পড়ার নিয়মঃ
একজন মুসলিম মুসাফির ব্যক্তি সফরের সময় প্রত্যেক চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ
দুই রাকাত করে আদায় করবেন। তবে তিন রাকাতবিশিষ্ট এবং দুই রাকাত বিশিষ্ট নামাজ
কমানো যাবে না।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ' আল্লাহতায়ালা তোমাদের নবী (রা.)-এর
মুখে নামাজকে মুকিম অবস্থায় চার রাকাত এবং সফর অবস্থায় দুই রাকাত ফরজ করেছেন।
(মুসলিম, হাদিস: ৬৮৭)
তবে ফুকাহায়েকেরাম বলেন, মুসাফির ব্যক্তি মুকিম ইমামের পিছনে ইকতিদা করলে সে
ইমামের অনুসরণে পূর্ণ নামাজ আদায় করবে। (আল মাবসুত, সারাখসি: ১/২৪৩)
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ' মুসাফির যদি মুকিমদের সঙ্গে নামাজে শরিক
হয়, তবে সে যেন তাদের মতো (চার রাকাত) নামাজ পড়।' (ইবনে আবি শাইবা, হাদিস:
৩৮৪৯)
কসর নামাজ কাজা পড়ার নিয়মঃ
আপনাদের মনে হয়তো একটা প্রশ্ন জাগে যে, সেটা হল কসরের নামাজ কাজা হয়ে গেলে
সেটা কিভাবে পড়তে হয়? যদি সফরের সময় আপনাদের কারো কসরের নামাজ কাজা হয়ে
যায় তাহলে বাড়িতে ফেরার পরে আপনাদেরকে কসরের কাজা নামাজ আদায় করতে হবে
অর্থাৎ চার রাকাত নামাজের জায়গায় দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হবে।
আবার অনেকেই আছে যাদের ঘরে কাজা হওয়ার নামাজ যদি সফরে গিয়ে আদায় করতে
হয়, তাহলে তাদেরকে পূর্ণ নামাজ আদায় করতে হবে।
কসর নামাজের ফজিলতঃ
অন্যান্য নামাজের মতই কসর নামাজেরও যথেষ্ট ফজিলত রয়েছে। মূলত এই কসর নামাজের
বিধানের মধ্যে মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি বড় শিক্ষা রয়েছে আর তা হল কোন
অবস্থাতে ফরজ এবাদত অলসতার কারণে কিংবা সমস্যার কারণে পরিপূর্ণ ছেড়ে দেওয়ার
সুযোগ নেই।
এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, 'তোমরা সুপারের সময় নামাজকে কসর কর,
কেননা এর মধ্যেই রয়েছে উত্তম প্রতিদান।'
হযরত ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে কিছুটা দীর্ঘ একটি উদ্ধৃত করেছেন,
যার শেষের পবিত্র শব্দবলি এরূপ-আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
কাছে কশর নামাজ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলাম।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটি একটি সাদকাহ যা আল্লাহতায়ালা
দান করেছেন। তোমরা এরশাদকা গ্রহণ করো তোমরা এ ' সাদকাহ' গ্রহণ করো। (সহিহ মুসলিম)
যে ব্যক্তি সফরে চার রাকাত (ফরজ) পড়ে, সে আল্লাহ তায়ালার ' সাদকাহ' থেকে মুখ
ফিরিয়ে নেয়। আল্লাহ তায়ালার ' সাদকাহ' কবুল করা এবং সফরে কসর করা ফরজ। (
তাবরানী মুজামে সাগীর)
হযরত ইবনে উমাইয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব
রাদিয়াল্লাহু আনহু এর কাছে আরশ করলাম, আল্লাহতো বলেছেন যদি, তোমরা কাফেরদের
পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য কোন রকম ফেতনার আশঙ্কা কর তাহলে নামাজ কসর করাতে কোন
দোষ নাই। এখনতো নিরাপত্তা যুগ (সুতরাং কসর না করা দরকার)।
হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তুমি যে কথায় আশ্চর্যান্বিত হয়েছো
আমিও সে ব্যাপারে আশ্চর্য বোধ করেছিলাম এবং রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম উত্তরে তিনি বললেন, এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে
তোমাদের জন্য একটি সদকা গ্রহণ করো। (সহীহ মুসলিম)
শেষ কথাঃ
আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে জানিয়েছি সফরে গিয়ে কিভাবে কসর
নামাজ আদায় করতে হবে। সফরে গিয়ে অবশ্যই নামাজ আপনাকে সংক্ষিপ্ত করতে হবে সে
সম্পর্কেও জানিয়েছে। আর এসব বিষয় জানতে পেরে আপনারা উপকৃত হয়েছে। এরপর থেকে
নিশ্চয়ই আপনারা সফরে গিয়ে কসর নামাজ আদায় করবেন।
তাছাড়া আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনারা উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে আপনাদের
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করবেন। আর এরকম নতুন নতুন কনটেন্ট পেতে আমাদের
ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন।
সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url